Saturday 17 September 2022

দেবব্রত রায়ের তিনটি কবিতা --

দেবব্রত রায়ের তিনটি কবিতা --

পাখিদের গণসংগীত

সূর্যের দিকে পিঠ পালটানোর মুহূর্তে 
দুষ্টু আত্মারা তোমাকে ছেড়ে চলে যায় 
কারণ,ওই মুহূর্তে পাখিরা গান গেয়ে ওঠে। 

দুনিয়া-কাঁপানো সেইসব গণসংগীত
বুকের ভিতর একটা নদীর জন্ম দেয়,  
যার শরীরটা শুধু , পাহাড় ভাঙা-ঘাম 
আর, আকাশ দিয়ে তৈরি  

এবং এইসব কারণেই বোধহয়, 
সমুদ্রগুলো নোনতা আর,নীল-
রঙের হয়ে ওঠে 

বারোমাস যাদের সমুদ্রেই নাওয়া-
খাওয়া , তারাই এইসব তত্ত্বতালাশ 
মেঘের এনভেলাপে ভরে উপকূলবর্তী-
অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়, যা এঁদো ডোবা-
আর,খালবিলগুলোকে ক্রমশ
আকাশমনা করে তুলতে চায় । 

বুকের খোয়াইয়ের অজন্তা-ইলোরায় কান 
পাতলেই,পালতোলা জাহাজের দাঁড়ের শব্দে 
ভাটিয়ালি ঝুমুর বাউল...এমনকী, 
রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দের  সঙ্গে ফ্যান-ভাতের 
গন্ধও খা-খা  মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে 

আর, ঘুমন্ত রাজকন্যার কপালে
একঝলক বাদলাহাওয়া-র 
ছোঁয়ায় যেন কাড়া-নাকড়া 
ঢোল-ডগড় একসঙ্গে বেজে 
উঠলেই, প্রথম কান্নার দিনটার
 মতো সবকিছু মরূদ্যান হয়ে ওঠে 


ব্ল্যাকহোল-প্রসঙ্গে 


সেফটিপিনের সঙ্গে যে-সমস্ত 
জামা ও জুতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক  
তারা হাসলেই, পৃথিবী জুড়ে 
ভাতের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে 

আসলে,এইসব হাসির ভিতরে  
যে-দুধগন্ধ মিশে থাকে,তার 
কোনো বিকল্পই নেই একমাত্র, 
ভাতের গন্ধ ছাড়া 

একটা ডানার আশ্রয়ে সব-হারাদের 
ইচ্ছেগুলো খুব মিলমিশে থাকলেও,
কখনো-কখনো বাতাসে ধান-গন্ধ
আঁকার ইচ্ছায় বারুদের গন্ধকেও
ভীষণ নিজের করে নিতে  হয় 

একমুঠো শান্তির জন্য 
যুদ্ধ অত্যন্ত জরুরি বলেই
সেফটিপিন সম্পর্কিত জামা 
এবং জুতোরা ফসলের মুখ 
চেয়ে দীর্ঘজীবন হা-ভাতেই
থেকে যায়
 
ব্ল্যাকহোলের অন্ধকারেও 
তামাটে বলিরেখায় জং-
খাওয়া সেফটিপিন, 
বুকের হাড়-পাঁজরা বজ্রের হাতুড়ি- 
শাবল দিয়ে কখনো কখনো 
বিশ্বাসঘাতক হাওয়ায়-চপ্পলদের 
ডেথ-সার্টিফিকেট লেখে

অবশ্য,পৃথিবীর ধূলো-বালি মেখে 
যারা বড়ো হয় একমাত্র,তাঁরাই 
ব্ল্যাকহোল-প্রসঙ্গে হেরাক্লিস 
হয়ে ওঠে  


ডানাগুলো উদ্বাস্তু আর,ঝগড়াটে হয়ে উঠছে 


রসাতল থেকে পৃথিবীটা আবারও 
রসালো চমচমের মত ফিরে আসবে 
কিনা,সে-বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে 

কিন্তু, নিরাশাবাদের মধ্যেই তো
মায়াদেবীর কোল জুড়ে জন্ম নেয়
 মুশকিলআসান বুদ্ধদেব 


এমকী,আমরাও আত্মীয়স্বজনের লাশ 
পাশ কাটিয়ে একটা ঘামগন্ধ-মাখা নুন 
ইভিনিং নাইট-শো-র কিউতে গিয়ে 
আবারো ' লাইন দি-ই '

যদিও,এই আশ্চর্য চুম্বক-ক্ষেত্র তৈরির  
সময় হোমোস্যাপিয়েন্সদের অপেক্ষায়
কিছুই আটকে থাকেনি ফলে, রসাতল 
থেকে তুলে আনার জন্যও যে তাদেরকে
 বা,তাদের সবাইকে দরকার হবে তার 
কোনো মানেই নেই

বরং, ভরা গাজন নষ্ট করার জন্য 
এক শ্রেণির হোমোদের বেশ সুনাম 
আছে নাহলে, ঘর-দুয়ার নাড়ি-নক্ষত্র 
ঝলসে যাচ্ছে দেখেও ,তারা 
বারবার খাণ্ডবদাহনে মেতে 
উঠতো না 

পৃথিবীর এইসব শরীর খারাপের সিমটম
লেখা থাকে কাঁটাতারের বেড়ায় বিলুপ্ত-
প্রায় ডানার শায়েরীতে

মাথাগোঁজার লড়াইয়ে দিন-দিন
উড়তে না-পারা ডানাগুলো এতটাই 
উদ্বাস্তু আর,ঝগড়াটে হয়ে উঠছে যে 
তাদের বুকের ভিতর থেকে পদ্ম টাঁটি-র 
বদলে শুধুই, বিষাক্ত হুল বেরিয়ে আসে 
এবং মা-মেরিকেও যা রক্তাক্ত করে তোলে

Sunday 11 September 2022

পুষ্পকীট-- ডা. অরুণ চট্টোপাধ্যায়


পুষ্পকীট--

অরুণ চট্টোপাধ্যায়


ফুলের মধ্যে লুকিয়ে থাকি

গন্ধে নিই ভাগ,

পাপড়ি খেয়ে বেঁচে থাকি

ফুলেই করি দাগ।

ফুলের হৃদয় কুরছি যখন

গভীর গোপন প্রান্ত,

লুকিয়ে ব্যথা নিজের ভেতর

ফুল থেকে যায় শান্ত।

সুন্দর ফুল কুৎসিত করি

অকালে ঝরাই ফুলকে

প্রশ্ন করে না একটিও ফুল

ঝরে যায় এক পলকে।


Saturday 10 September 2022

সম্পাদক সমীপেষু--

সম্পাদক সমীপেষু--
এক কবি কবিতা খুঁজে ফিরছিল। একটা ঝর্ণা দেখতে পেয়ে সে কবিতা লিখতে বসল। সে লিখল, যেখানে পাহাড় পর্বত জঙ্গলের কথা উঠে আসে, উঠে আসে আকাশ সূর্য চ্ন্দ্র তারা ও রোদ্দুর কিরণ, আরো কত কিছুর কথা ! কথায় বলে, যেখানে পৌঁছায় না রবি, সেখানে পৌঁছায় কবি। আসলে কবির কল্পনা সীমাহীন। সেখানে সাপ নিয়ে লিখতে গিয়ে নাভি ছিদ্র উঠে আসতে পারে। প্রেমের খেলার সঙ্গে জীবনের আনুষঙ্গিক অনেক কিছু উঠে আসে।
প্রেমের সঙ্গে বিরহ মিলেমিশে একটা জীবন তৈরি হয়। প্রেমিক প্রেমিকার ভাব ভাবনার ভেতর দিয়ে প্রকৃতি জেগে ওঠে। এমন কি ঋতু পরিবর্তিত হয়ে চলে। 
কখনও প্রকৃতিকে পাল্টাবার চেষ্টায় অকাল বসন্তর সৃষ্টি হয়--সেখানে বুঝি প্রেমের নিষ্কাম খোসা ছাড়িয়ে লাল পানীয়ে নিয়ন আলোক প্রসাধন ফুটে ওঠে।
ভালবাসতে গেলে ভালো লাগতে হয় নতুবা ঘৃণা জন্ম নিতে পারে। এরপর সব কিছু পার করে কবির কলমে উঠে আসতে পারে ঘৃণার কবিতা।
কখনো কবিতার ছলে তোমার বুকে গেঁথে যেতে পারে রক্তাক্ত ছুরির ফলক। কলমের রক্তে প্রেমের নিশানে এক প্রেমিক অনায়াসে নিজের রক্তে লিখে দিতে পারে প্রেমের কবিতা।
যাই হোক, আনুরোধ, আমাদের পত্রিকা স্বরধ্বনি পড়ুন। আশা করবো, আমাদের বৈচিত্র্য ভাব ভাবনার কবিতা আপনার মনকে উদ্বেলিত করবে। ধন্যবাদ -- তাপসকিরণ রায়

প্রতিটি মানুষই জীবনকে ভালোবাসে,ভালোবাসে নিজেকে।নিজের প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দের সঙ্গে জীবন কাটাতে চায়।এটা সকলের জন্য সত্য হলেও আবেগ প্রবণ মানুষগুলির প্রত্যাশা থাকে তারও বেশী। এজন্য হয়তো  তারা প্রত্যাশা হিসাবে বাড়তি দুঃখই পায় জীবনে। আবেগ প্রবণতার  কারণে তারা  ভুলে যায়  বাস্তববোধ। তাদের কল্পনার রঙ আর বাস্তবের মেলবন্ধন হয়না কোনমতেই। আবেগের তাড়নায় ভুলে যায় জীবনের সব পথটুকু কুসুমাস্তীর্ণ নয়, জীবনে আনন্দ যেমন আছে,আছে বিষাদ , শোক,দুঃখ।হাসি কান্নার মিলিত সুবাসে গড়ে ওঠা খেলাঘর ভেঙে পড়ার  অপ্রত্যাশিত আঘাতে গভীর অবসাদে আচ্ছন্ন হয়ে পৌঁছায় আত্মবিশ্বাসহীনতার  ছায়া ছায়া জগতে।খুঁজে পেতে চায় অলীক আশ্বাস।জীবন পথে চলতে গিয়ে রাগ,ক্ষোভ,দুঃখ,আনন্দের অনুভূতিগুলো অর্থাৎ প্রক্ষোভ গুলোর সুষ্ঠ বিকাশ সাধন সম্ভব হয়নি,হতে পারতো যদি অন্তরের অবদমিত ইচ্ছে গুলো সৃজনশীলতার পথ ধরে মূর্ত রূপ পেত। শুধু তাই নয় হৃদয় মন্থন করে উঠে আসা  অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভাষায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে,আর এভাবেই জন্ম হয় কত কালজয়ী গল্প ,কবিতা,উপন্যাসের। -- সাবিত্রী দাস।

রমা গুপ্তর তিনটি কবিতা --

রমা গুপ্তর তিনটি কবিতা --

অশ্বত্থামার অনুশোচনা

আমি অশ্বত্থামা , দ্রোণপুত্র কৃপির স্নেহের সন্তান,
সপ্ত চিরঞ্জীবির এক চিরঞ্জীবি দৈববলে বলিয়ান।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আমিই যে শেষ সেনাপতি,
আসুরিক আচরণে আমার আজ এই অধোগতি।
পিতা আর মিত্র দুর্যোধন যবে হলেন যুদ্ধে হত,
প্রতিশোধ স্পৃহা  হলো মনে প্রবল জাগ্ৰত।
জ্বালামুখী হতে নির্গত উষ্ণ তরলের ন্যায় মন,
ক্রুব্ধ আমি পান্ডব বংশের ধ্বংস করিলাম পণ।
ছদ্মবেশে এক রাতে গিয়ে পান্ডব শিবিরে,
ঘুমের মধ্যে বধিলাম দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রেরে।
ভেবেছিলাম পঞ্চপান্ডবে  করেছি নিধন,
ভুল ভাঙ্গিল যখন সন্মূখে দেখিলাম পান্ডবগণ।
আচম্বিতে বিস্মিত হয়েও সেদিন করেছিলাম নিজেকে সম্বরণ।
ক্রোধিত পান্ডবগণ বলেন গোপনে কেন করিলে দ্রৌপদীর পুত্রনিধন   !
পাষন্ডের মত বলেছি সেদিন  পান্ডব বংশের ধ্বংস করেছি পণ।
বংশের বাতি দিতে তাইতো রাখি  নাই একজন।
উত্তরার গর্ভ সংবাদ শুনে ভীমসেনের মুখে,
রোষের অনলে পুড়ে প্রতিহিংসা জাগে বুকে।
উন্মত্ত হয়ে গর্ভনষ্ট লাগি নিক্ষেপিলাম ব্রহ্মাস্ত্র ,
তাই দেখে পান্ডবগণ হলেন ভীষণ ত্রস্ত।
মোর পিতা আর সখাকে হত্যা করেছিল ছলিয়া,
শোকে তাই একাজ করেছি উন্মত্ত হইয়া।
কৃষ্ণ আসিয়া কহেন ব্রহ্মাস্ত্র ফিরায়ে লও,
ভ্রূণ হত্যা মহাপাপ নিস্তার নাহি পাও।
দুরাচারী কংস,রাবনও করে নাই এ কাজ,
দ্রোণ পুত্র  হয়ে তুমি পিতার রাখিলে না লাজ।
এ মহাপাপ যে ক্ষমারও অযোগ্য,
ব্রহ্মাস্ত্র ফিরায়ে আনি কর ন্যায় কার্য।
ক্ষমা তো চাই নি সেদিন, হয়েছি দম্ভিত,
ক্রোধিত হয়ে কৃষ্ণ করেন দন্ডিত।
কপাল হতে চক্র দ্বারা তুলে নিলেন মোর মণি,
অভিশাপ দিলেন সর্বাঙ্গে ঘা লয়ে বাঁচিয়া থাকিবে তুমি।
পুঁচ রক্ত পড়িবে সদা ,লোকে কাছে নাহি যাবে,
জল যাচি নাহি পাবে আহার না জুটিবে।
সেই হতে আজও আমি ভ্রমিতেছি একা,
ঘৃণা ভরে লোকে দেখে নাহি স্বজনের দেখা।
ব্রহ্মাস্ত্র ফিরাইবার শিক্ষা দেন নাই পিতা,
ফিরাইতে ইচ্ছা হইলেও সেদিন পারি নাই তা।
অর্ধশিক্ষা ছিল মোর সেদিনের ভুল,
অর্ধশিক্ষা ভয়ঙ্কর অহংকারের মূল।
মরিব না অহংকার ছিল মোর মনে,
অমরত্ব দিলেন কৃষ্ণ আজ মরি প্রতিক্ষণে।
কঙ্কালসার দেহ মোর দুর্গন্ধে ভরা,
ন্যুব্জ হয়ে চলি আমি সারা দেহে জরা।
ব্রহ্মাস্ত্রে বিনাশ হয়েছিল উত্তরার গর্ভ সন্তান,
কৃষ্ণ তার পুণ্য বলে পুনঃ সঞ্চারীলেন প্রাণ।
পরবর্তিতে সে সন্তান আসিল ধরনীতে,
পরিক্ষীৎ নামে খ্যাত হলেন মহাভারতে।
শুনিয়া সে সংবাদ শান্তি হলো মনে,
  বন্দিলাম মনে মনে শ্রীকৃষ্ণ চরণে।

সীমাহীন নৈরাজ্যতা

বর্তমানে সংকীর্ণতা আর স্বার্থপরতায় সমাজ জীবন গিয়েছে ভরে,
বিষন্ন আবহে সভ্যতা তাই আজ নিভৃতে গুমরে মরে।
আগ্ৰাসী মনোভাব কেবলই বিধ্বংসে আনন্দ উল্লাস,
বিবেক মানবিকতা দিয়ে বিসর্জন বর্বরতায় বিলাস।
বিষবাষ্পে ভরেছে গগন মলিনতা মনের ঘরে,
স্বার্থসিদ্ধিতে  ব্যস্ত  সবাই চেনেনা আপন পরে।
বিকিয়েছে মনুষত্ব স্তাবকতাই যেন প্রগতির মান,
দস্তুর এখন যোগ্যের অপমান, অযোগ্যের স্তুতিগান। 
বিশ্বাস করে লুকোচুরি খেলা মুখোশের আড়ালে।
মান হুঁশ সব লুপ্ত হয়েছে রাহুর করাল গ্ৰাসে,
সীমাহীন নৈরাজ্যতায় প্রতিবাদ নেই কোনো, মানুষ নীরব ত্রাসে।

বীরবাহু বধ

শোকাগ্ৰস্ত  লঙ্কাপতি    বীরবাহু তরে
বিষাদে নিঃশ্বাস ছাড়ে   বলে ক্ষীণ স্বরে
হে বীর লঙ্কার তুমি        কুলের প্রবর
রাক্ষস কুলেতে জন্ম     প্রতাপ প্রখর।
স্তম্ভিত হয়েছে রাম        মনে খুশি তাই,
তোমার মতন বীর         বুঝি দেখে নাই।
হায় পুত্র বীরবাহু           বাহুবলি কত
হৃদয়েতে বজ্র যেন         হানে ব্যথা শত।

 ওরে  ভগ্নী সূর্পনখা!      তোর অপমানে
ক্রোধান্বিত হয়ে কেন,     গেলাম সে স্থানে!
মতিভ্রম হলো শেষে        ছদ্মবেশ ধরে 
রাম লক্ষ্মী হরণের          পাপ স্পর্শ করে।
অন্তরেতে হাহাকার         নেই পরিসীমা
হৃদি বৃন্তে ফোটা ফুল       স্নেহ মধুরিমা,
কেউ যদি নেয় ছিঁড়ে        রক্ত ক্ষরণেতে
নিস্তেজ হয় যে দেহ          শোক আবহেতে।

যন্ত্রণা অনলে পুড়ে           মরি আমি। যাও
মন্দোদরী, চিত্রাঙ্গদা        কে সান্ত্বনা দাও।
বাক্যহীনা চিত্রাঙ্গদা         বসে পুত্র ধরে
মন্দোদরী গেলে কাছে     বলে সকাতরে,
দিয়েছি সন্তান যবে         লঙ্কেশের কাছে  মনে মনে জানি পুত্র        সুরক্ষিত আছে।
মেনে নিতে পারিনা         যে এই অঘটন,
হৈমপুরী রক্ষা হেতু           বধ মম ধন।

ততক্ষণে সভা মধ্যে         প্রজাদের ভীড়
বীরবাহু বধে সব              বিষণ্ণ গম্ভীর।
লঙ্কাপতি এসেছেন           ধীর পদে অতি,
চিত্রাঙ্গদাকে  বলেন          শান্ত রাখো মতি।
বিভীষণ করেছে যে,         মৈত্রী বৈরী সাথে
লঙ্কা রক্ষা ভার দিই          বীরবাহু হাতে।
মোক্ষম সমরে রক্ষে          প্রাসাদ লঙ্কার 
কুলরত্ন বীরবাহু                রাজ্য অলঙ্কার।

ক্রন্দন করোনা প্রিয়ে        হৈমপুরী ধনি,
সমরেতে জিতেছে সে      বীর চূড়ামণি।
ক্ষিপ্ত কণ্ঠে চিত্রাঙ্গদা        বলেন, রতন
দিয়েছিল দেব মোরে,       রক্ষার্থে যতন
আপনাকে দিই, পাখি       যেমন শাবকে
রাখে লুকিয়ে কোটরে,      বলুন পুত্রকে 
রেখেছেন কোন্ খানে?     প্রজাগনে  রক্ষা
নৃপ ধর্ম। তবে কেন           পেলোনা সুরক্ষা!

পুত্র আমার হায় রে!        বিধির কেমন
বিচার! রাঘব ক্ষুদ্র           নয়  বলে মন,
যাঁর নামে শিলা ভাসে      সমুদ্র  মাঝার
ঈশ্বরীয় হবে কেউ           ঐশ্বর্য অপার।
বশিভূত কপি জাতি        করছে সমর,
মানুষ নয় দেব সে,          নিশ্চিত অমর।
হয় যদি দেবতা সে          ভাগ্যবান মানি,
ভগবান হস্তে বধ             সদা শুভ জানি।

কৌশিক গঙ্গুলির গুচ্ছ কবিতা --

কৌশিক গঙ্গুলির গুচ্ছ কবিতা --

"লজ্জা "

যারা শিশুদের ধর্ষণ করে , ডাইনি অপবাদ দিয়ে অসহায়াদের পুড়িয়ে মারে , 
তাদের কথা শুনতে আমার লজ্জা করে । 
যে সমস্ত নারীরা সংসার ভাঙে , বিষিয়ে দেয় মানুষের মন , 
তাদের কথা ভাবতেও আমার লজ্জা লাগে । 
যে সব পুরুষরা স্বার্থের জন্য বিবেককে ত্যাগ  করে , 
তাদের চোখে দেখতেও আমার লজ্জা হয় । 
যে সমস্ত নেতারা টাকার জন্যে দেশকে বিক্রি করে , 
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির  তুফান তোলে , 
তাদের নাম উচ্চারণেও আমার লজ্জা লাগে । 
যারা ধর্ম ও জাত নিয়ে মারামারি , খুনোখুনি করে , 
তাদেরকে মানুষ বলে ভাবতেও আমার লজ্জা করে ? লজ্জা !    এসব মেনে নিতেও আমার লজ্জা লাগে , খুব লজ্জা .... । 

"না কবিতা "

একজন ভালো মানুষ কেন সর্বদাই হেরে যাবে ? একজন প্রভাবশালী কেন সর্বদাই লুটেপুটে খাবে ? একজন চালাক কেন অন্যদের ঠকাবে  ?
 একজন ভিখারী কেন সর্বদাই ভিক্ষে চাইবে? একজন আদর্শবান কেন সর্বদাই অপমানিত হবে? একজন কবি কেন  সম্পাদকদের তোষামোদে মন দেবে ?
একজন সরল মানুষ কেন সংকোচে গুটিয়ে যাবে? একজন বোকালোক কেন সমাজে অবহেলিত থাকবে ?
একজন প্রেমিক কেন প্রেম নিবেদনে দ্বিধা করবে? একজন বালক কেন বড়দের শাসনে চাপে থাকবে?
  একজন স্বাধীন মানুষ কেন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে ?
একজন মানুষ কেন অন্যদের নিন্দা করবে ,সম্পর্ক  বিষিয়ে দেবে ?
একজনের দুঃখে কেন অন্যরা কাঁদে না?
 একজন অসহায়ের কথা কেন অন্যরা ভাবে না? একজন অন্যজন, অন্যজন একজন ,একজন অন্যজন।

একটি খোলা চিঠি 

 আপনার সঙ্গে দেখা হলেই মাষ্টারমশাই , দেখবেন আমার দুচোখে স্বপ্নের অসুখ । বুঝিনা কিভাবে কাটবে জীবন বেপরোয়া , এই বাউন্ডুলেপনা আগুন ধরায় না শুধু খ্যাপাটে ঝড় উদাসীন মানুষের মতন । তারপর মাষ্টারমশাই কোথায় রাখলেন সেই কাঁটার মুকুট ? দেখুন আমার সঙ্গে ক্রুশকাঠ , ছেঁড়া ট্রাউজারের পকেটে খোলামকুচি । পৃথিবীর অবশিষ্ট প্রতিটি সবুজ প্রান্তরে আমার তাবু খাটানো আর সারা আকাশজুড়েই রাজত্ব , গান গেয়ে বেড়াই গলা খুলে কোনো ব্যাকারণ না মেনে প্রাণের তাগিদে । যাদের বুকের মধ্যে ঘরবাড়ি , যাদের হাসির মধ্যে অজস্র মণিমুক্তো , যারা হৃদয় ছোঁয়া মানুষ - এক পৃথিবী ভালোবাসা ,  মাষ্টারমশাই আমরা তাদের শুধুই তাদের ।      

"তরজা "

রক্তের বদলে মদ , গাছের বদলে ক্যাকটাস  আর নৌকাবিলাস । সত্য এখন বেশ্যাখানায়, রাজনীতির মন্চ্চে , জেলখানার কুঠুরিতে , জ্বলন্ত চুল্লিতে । এখন কাকতারুয়াদের কোনো কাজ নেই , ভারতজুড়ে তরজায় মাতে নেতা - মন্ত্রী- দল- মিডিয়া আর বুদ্ধিজীবিরা । শব্ধসন্ত্রাসে ও ধ্বংসে মাতোয়ারা মৌলবাদ । দুনিয়া গোল্লাতে যাক ,বদমাশেরা দুধে ভাতে থাক , কবির ক্কান্না কেউ না শুনতে পাক , সব মেনে নিতে থাক । / কৌশিক গাঙ্গুলী ।

কবিতা ভেঙে ভেঙে--তাপসকিরণ রায়

কবিতা ভেঙে ভেঙে--তাপসকিরণ রায়


কবিতা ভেঙে ভেঙে একেকটা শব্দ হয়ে যাচ্ছে...কোন কোন শব্দ আবার স্বয়ংসম্পূর্ণ এক একটা কবিতা হয়ে যাচ্ছে।

ভাবনাগুলি অতীতে সরে গেলে কবিকে খুঁজে পাই।

এক উদাসী উদভ্রান্ত কবি দুপুর রোদ্দুরে পথ ভেঙ্গে চলেছে...তার হোঁচট খাওয়া কবিতাগুলি উদ্ধত বিদ্রোহে ফেটে পড়ছে।

এক কবির রাতবিছানায় এক টুকরো জোৎস্নালোক ঠিকরে পড়েছে তাই নিয়ে সে লিখছে প্রেমের কবিতা।

আবার লাল পেগের ছোঁয়ায় জীবনের নষ্ট ভালবাসার প্রলাপ উঠে আসছে কবিতায়--সে তার প্রেমিকার ছায়ায় একগুচ্ছ চুমু সেঁটে দিচ্ছে।

নারী ধর্ষণের ছবি থেকে একটা ধোঁয়াশা কবিতা উঠে আসছে--সেখানকার আশপাশের মোমশিখাগুলি বারবার কেঁপে উঠছে।

সেখানে স্তব্ধতার মাঝে কোন কবিবে সামাল বমি করে যাচ্ছে তার অজীর্ণ খাবার।

প্রেরণা বড়ালের গুচ্ছ কবিতা --

প্রেরণা বড়ালের গুচ্ছ কবিতা --

মৃত সম্পর্ক (গদ্য কবিতা)
----------------------------
কিছু মানুষ  আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সম্পর্ক গুলকে ধরে রাখার জন্য।
কিন্ত কি করে ধরে রাখবে?অধিকাংশই তো এখানে পন্য।
ছোট থেকে বড়, আত্মিয় স্বজন,পরিচিত অপরিচিত - আত্ম সম্মানের নামে আত্ম সন্তুষ্টিতে মগ্ন। 
তা সে যেভাবে যে পথেই হোক,হোক না সে নগ্ন। 
কেউ বা করছে না, তারা শরতের মেঘের মত ভেসে বেড়াতে ভালোবাসে।
কিছু উদাস, আনমনা,নির্মোহী,কিছুতেই কিছু না যায় না আসে।
তার ভেতরে ও সম্পর্ক বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। 
তবুও কেন যেন ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে।
আর মৃত সম্পর্ক থেকে- উৎকট দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে।
কেউ তটস্থ নয় বরং অবলীলায় অদ্ভুত আনন্দে মেতে উঠছে।।
                       
শেষ হল অপেক্ষা
----------------------------
কি গো অবশেষে এলে বুঝি?
শেষ হল অপেক্ষার, আজি।
গুমোটের বন্ধ দরজায়,
কতদিন তোমার আশায়,
কাটিয়াছে দিন আর রাতি।। 

বিন্দু বিন্দু তুমি বরষিলে,
সিক্ত ধরা তোমার সলিলে।
অঙ্কুরিত হল নব প্রান।
গাহিয়া উঠিল সবে গান ।
শিহরণ মনেতে জাগালে।।

অন্তপুর- (গদ্য কবিতা)
-----------------------------
আমার অন্ত পুরে অধিষ্ঠিত প্রিয় তুমি।
আমার ভালবাসা,ভাল -মন্দ, বিশ্বাস- অবিশ্বাস, সবটা মিলে শুধু তুমি আর তুমি।
তবুও তুমি আমায় বেঁধে রাখতে পার না।
ছুটে চলে যাই বাইরে।সেখানে যে সবাই আমাকে ডাকে হাত ছানিতে।
তাদের চাকচিক্য রসেবসে আমি ডুবে যাই।
যদিও জানি মিথ্যে সবটাই। তবুও কিসের টানে যেন বাঁধা পড়ে যাই।
যখন হাপিয়ে উঠি তখন ফিরে আসতে চাই  ।আমি নিশ্চিত অন্ত পুরে পৌছালেই পাব অসীম আনন্দ,চির শান্তি।কেননা সেখানে কেবল  তুমি আর আমি।

শোন রে মন
-----------------------------
এ দুই দিনের কায়া।
জান, সব   কিছুই মায়া ধরাতলে।
রহ  গো  সাবধান, 
হয়ে  এক  মন ,  
ডাক তাঁরে, যে উদ্ধারিবে তোরে।
এক  পাশে  কাজ  থাক।
যত্ন   কর   এখন,
যম কাছে এলে, রাখিবে সেই,
যার নামে চেতনা জাগে রে।  
           

দেবব্রত রায়ের তিনটি কবিতা --

দেবব্রত রায়ের তিনটি কবিতা -- ১ পাখিদের গণসংগীত সূর্যের দিকে পিঠ পালটানোর মুহূর্তে  দুষ্টু আত্মারা তোমাকে ছেড়ে চলে যায়  কারণ,ওই ...